- কার্টুন
- ত্রাণ ও পুনর্বাসন
ত্রাণ ও পুনর্বাসন
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে ঘূর্ণিঝড় মোকার আঘাত না পড়িলেও উপকূলে উহার ক্ষয়ক্ষতি নগণ্য নহে। বিশেষত কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে এই ক্ষতচিহ্ন তথাকার মানুষদের বেদনার কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। অনেকেরই ঘরবাড়ি ধ্বংস হইয়াছে। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙিয়াছে। উপরন্তু সমকালের মঙ্গলবারের প্রতিবেদন অনুসারে, আশ্রয়কেন্দ্র হইতে অনেকে গৃহে প্রত্যাবর্তন করিলেও রান্না করিয়া খাইবার মতন অবস্থা তাহাদের নাই। কাহারও কাহারও শুকনা খাবার থাকিলেও উহা শেষ পর্যায়ে। অর্থাৎ ত্রাণের আশায় উপকূলের মানুষ এখন প্রতীক্ষার প্রহর গুনিতেছে। ইহা সত্য, অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের কাজ শুরু করিয়াছেন। সেন্টমার্টিনে কোস্টগার্ডের তরফ হইতে চাল, ডাল, চিড়া, চিনি, লবণ, তৈলসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করিবার খবর সমকালে আসিয়াছে। তবে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই যাহাতে উপকৃত হইতে পারে তজ্জন্য পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানাইয়াছেন, ঝড়ে যাহাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হইয়াছে তাহাদের টিন এবং গৃহ নির্মাণের জন্য অর্থ সহায়তার নির্দেশনা দেওয়া হইয়াছে এবং মাঠ পর্যায় হইতে তালিকা চাওয়া হইয়াছে। আমাদের প্রত্যয় অটুট থাকুক– এই তৎপরতা খুব দ্রুতই সম্পন্ন হইবে।
সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, স্থানীয় প্রশাসন ঘূর্ণিঝড়কবলিত এলাকার ফসল ও বসতঘরের ক্ষতির তালিকা করিতেছে এবং তাহারা দশ সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে বলিয়া জানাইয়াছে, যেগুলির মধ্যে অন্তত দুই সহস্র বসতঘর সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত। স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। তবে স্থানীয় একজন সরকারি কর্মকর্তা সমকালকে বলিয়াছেন, ত্রাণ পাইতে একটু সময় লাগিবে। কারণ সরকারি ত্রাণ দিবার বিধিবদ্ধ নিয়ম রহিয়াছে। আমরা মনে করি, নিয়মের দোহাই দিয়া এই তৎপরতায় বিলম্ব করা চলিবে না। দুর্যোগকবলিত মানুষদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনকার্য শুরু না হইলে দুর্ভোগ আরও বাড়িবে, যাহা কোনোভাবেই কাম্য হইতে পারে না।
অস্বীকার করা যাইবে না, ঘূর্ণিঝড় মোকা যে আসিতেছে– উহার পূর্বাভাস পাইবামাত্র জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সরকার তৎপর হইয়াছে। বেসরকারি উদ্যোগও এই ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করিয়াছে। দুর্যোগকালীন উপকূলের সাত লক্ষাধিক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনয়ন এবং তথায় তাহাদের অবস্থানকালীন ব্যবস্থাপনার কার্যটি মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। এই কারণেও যে ক্ষয়ক্ষতি কম হইয়াছে, তাহাও উল্লেখ করা প্রয়োজন, যদিও অপ্রত্যাশিত ও বেদনাদায়কভাবে মহেশখালীর ৩ লবণচাষির মৃত্যু ঘটিয়াছে এবং আরও কয়েকজন লবণচাষি নিখোঁজ রহিয়াছেন। দুর্যোগপূর্বকালীন সরকারের সেই দায়িত্বশীল আচরণ আমরা দুর্যোগপরবর্তী সময়েও দেখিতে চাই।
একই সঙ্গে যাহাদের প্রাণহানি ঘটিয়াছে, সেই সকল পরিবারের পাশে দাঁড়াইবার পাশাপাশি নিখোঁজ চাষিদের খুঁজিয়া বাহির করিতে দ্রুত ব্যবস্থা লইতে হইবে। ঝড়ের কবলে লবণ পড়িতে পারে– সেই পূর্বাভাস ধরিয়াই অন্তত দুই দিন পূর্বেই লবণ উঠাইবার কথা ছিল।
আমরা দেখিয়াছি, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোর মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পও রহিয়াছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর, শিক্ষাকেন্দ্রসহ তথাকার অন্যান্য অবকাঠামোও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা চাই। সিডর, আইলাসহ অতীতের বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের যথাযথ পুনর্বাসনে বহুবিধ গাফিলতির কথা, প্রধানত সরকারের দিক হইতে– আমরা জানি। এমনও অভিযোগ রহিয়াছে, শ্রেণি অবস্থানের দিক হইতে অধিকাংশ নিম্নবর্গভুক্ত বলিয়া উপকূলের মানুষদের প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এক প্রকার উদাসীনতা ক্রিয়াশীল। এইবার এ বিষয়ে সচেতন থাকিয়া সরকারের শীর্ষ মহল ত্রাণ ও পুনর্বাসন তৎপরতা যথাযথভাবে তদারকি করিবে বলিয়া আমাদের প্রত্যাশা।
মোকার প্রভাবে দুর্যোগকবলিত এলাকা, তৎসহিত সমগ্র দেশের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়াছে। ইহার ফলে শিল্প উৎপাদনসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হইতেছে। যত দ্রুত সম্ভব সর্বত্র বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক করিতে হইবে। দুর্যোগকালে এই পরিষেবা অব্যাহত রাখিবার পূর্বপ্রস্তুতির বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষণীয় হইয়া থাকুক।
মন্তব্য করুন