নদী উদ্ধারের মহাপরিকল্পনা দেশের বৃহৎ স্বার্থে হচ্ছে, নাকি দখলদারদের স্বার্থে হচ্ছে- তা নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি। বাস্তবে সরকারের নদীর দখলদার উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড ত্রুটিপূর্ণ। নদী দখলমুক্ত করতে হাইকোর্টের নির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে প্রধানমন্ত্রী ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা 'মুক্ত নদী প্রবাহ' অধরাই থেকে যাবে।

শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বুড়িগঙ্গা রিভারকিপারের উদ্যোগে 'সাম্প্রতিক নদী-উদ্ধার তৎপরতা, মহাপরিকল্পনা ও নদীর ভবিষ্যৎ' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল। বক্তব্য রাখেন বাপার নির্বাহী সদস্য শারমীন মুরশিদ, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন সমন্বয়কারী মিহির বিশ্বাস, ব্রহ্মপুত্র রিভারকিপার ইবনুল সাঈদ রানা প্রমুখ।

ডা. আব্দুল মতিন বলেন, মহাপরিকল্পনার বিষয়ে দেশের মানুষ কিছু জানে না। কী সেই মহাপরিকল্পনা, তা দেশের মানুষের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে। হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া নদীর তিনটি অংশ- তলা, তট ও পাড় (১০ থেকে ৫০ মিটার প্রস্থ) এই তিনটি অংশের ভেতরের সব স্থাপনা নির্মোহভাবে উচ্ছেদ না করলে এই অভিযান সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নয়।

লিখিত বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, আমরা 'নদী ধ্বংসাত্মক চলমান ওয়াকওয়ে প্রকল্প' বাস্তবায়নের উদ্যোগের কথা দেশবাসীকে আগেই জানিয়েছি। গত ১৪ জুলাই বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীর ভূমিতে পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের স্থাপিত সাইনবোর্ড আমাদের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। উল্টো অবৈধ ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজকে দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুমোদন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, উচ্ছেদ তৎপরতা চলাকালীন সংবাদমাধ্যম আমিন মোমিন হাউজিং কোম্পানির দখল গোচরে আনায় তুরাগ নদীর ওই অংশের তলদেশ পুনরুদ্ধার করে সরকার। উদ্ধার কাজ পরিচালনায় বর্তমান সরকারের দৃঢ়তার পরিচয় প্রশংসনীয়। তবে এর মাধ্যমে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বছিলা গার্ডেন সিটি, বছিলা ফিউচার পার্ক, সূচনা হউজিং, বছিলা মডেল টাউন, চন্দ্রিমা উদ্যান হাউজিং, ঢাকা উদ্যান, বছিলা সিটি হাউজিং, তুরাগ হাউজিং, মীর আক্তার সিমেন্টসহ অনেক অবৈধ স্থাপনাকে প্রকারান্তরে বৈধতা দিতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি। তাই আদালতের রায় যথাযথভাবে নদীর সীমানা চিহ্নিত করে, দখলকৃত জায়গার স্থাপনাগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

শারমীন মুরশিদ বলেন, টাস্কফোর্স এবং কমিশনের কাজটি জটিল বিষয়। নদী উদ্ধার কাজটি তিনটি পর্যায়ে করতে হবে। দেশের ৪০৫টি এবং আন্তর্জাতিক ৫৭টি নদীর সীমানা নির্ধারণের পরিকল্পনা অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে।