ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে চলমান সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংঘর্ষে মেইতি, কুকি এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের অন্তত ৫৪ জনের মৃত্যু হয় বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। যদিও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে এলাকার বাসিন্দারা দাবি করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বাড়িঘর, যানবাহন, গির্জা ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে। গত সপ্তাহে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো রাজ্যের প্রধান জাতিগোষ্ঠীর উপজাতীয় মর্যাদা দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একটি সমাবেশ করার পর সহিংসতা শুরু হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সোমবার সব পক্ষকে আশ্বস্ত করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কোনো সম্প্রদায়েরই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কারণ নেই। সব দিক বিবেচনা করেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি সম্প্রদায়কে তপশিলি উপজাতি হিসেবে সংরক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৩ মে থেকে মণিপুরে চলা সহিংসতা নিয়ে এই প্রথম মুখ খুললেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন, আদালত একটি আদেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। মণিপুর সরকারের সঙ্গেও পরামর্শ করা হবে। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
গত ১৪ এপ্রিল মণিপুরের হাইকোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি সম্প্রদায়ের দাবি খতিয়ে দেখতে মণিপুর সরকারকে নির্দেশ দেন। মেইতি সম্প্রদায়ের দাবি– তাদের মণিপুরের অন্যান্য উপজাতির মতোই সংরক্ষণ দিতে হবে। কারণ, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় তারা পিছিয়ে পড়ছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে উপজাতি সমাজ। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরেই এপ্রিলে মণিপুরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একাধিক জনজাতি গোষ্ঠীর এমএলএ পদত্যাগ করেন।
হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে উপজাতি সম্প্রদায় একটি মিছিল বের করে। মিছিলটিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা শুরু হয় প্রধানত মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম মণিপুরের বিভিন্ন জেলায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। মাঝেমধ্যে কারফিউ শিথিল করা হলেও সাধারণভাবে সব উপদ্রুত অঞ্চলে কারফিউ রয়েছে। আকাশে ধারাবাহিকভাবে উড়ছে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। রাজ্যের প্রধান প্রধান শহর তো বটেই, পার্বত্য অঞ্চলের গ্রামগঞ্জেও টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ। তবে রাজ্যে এখনও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে বিজেপিরই এক বিধায়ক মেইতি সম্প্রদায়ের জন্য তপশিলি উপজাতির মর্যাদা সম্পর্কিত মণিপুর হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছেন।
হাইকোর্টের অপ্রীতিকর আদেশের ফলে মণিপুরে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মণিপুর বিধানসভার পার্বত্য অঞ্চল কমিটির (এইচএসি) চেয়ারম্যান ডিঙ্গাংলুং গ্যাংমেই। খবর বিবিসির।
মন্তব্য করুন