
এই যে আজ সকালে শেষ সূর্য উঠেছে ২০২১ সালের; সন্ধ্যা নামলেই মহাকালের অতলে ডুব দেবে সে। আর চকিতে মনে করিয়ে দেবে, এটি ছিল একাকী নিঃসঙ্গ মানুষদের শঙ্কায় ভরা সংগ্রামের সুবর্ণ এক বছর। কোনো কিছু ঘটে যাওয়ার অনেক পরে আরও নিবিড় করে অনুভব করা যায় তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব। ঠিক তেমনি বৈশ্বিক মহামারি কভিডের সর্বস্পর্শী সংকট নগ্ন হয়ে ফুটে উঠতে শুরু করেছে এই বছরে এসে; যদিও করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুশূন্য দিবস এসেছে, তবুও বছরের শেষে এসে ওমিক্রন উঁকি দিয়ে বলে উঠেছে, করোনার বহুরূপী খেলা দেখা যাবে আরও বহুদিন। কিন্তু করোনার রুদ্র ও রুদ্ধশ্বাসময় সংক্রমণের মধ্যেও বিস্ময়কর ঘটনাটি ছিল, তার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে একাকী, নিঃসঙ্গ গরিব মানুষদের উঠে দাঁড়ানো। অর্থনৈতিক স্তরের শক্তিমানদের দেওয়া প্রণোদনাকে বিবেচনায় নিয়ে ও প্রতিতুলনা করে খুব স্পষ্টভাবেই বলা যায়, রাষ্ট্র ও সমাজের সবচেয়ে ভঙ্গুর ও প্রান্তিক এই দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকারি তেমন কোনো পরিকল্পিত কার্যক্রম ছিল না। বরং বছর শেষে খবর এসেছে, ওএমএসের ট্রাকের সংখ্যা কমেছে, রাজধানীর নিম্নবিত্ত মানুষ আরও বিপন্নম্ন হয়েছে তাতে। এ রকম বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে বারবার অসহায়ত্ব ও বিচ্ছিন্নতার স্বাদ নিতে নিতে তারা টিকে থাকার সংগ্রাম করে চলেছেন।
বিষয়টি আশার, আবার হতাশ্বাসেরও বটে। বিশেষ করে এ বছরটিকে যদি আমরা দেখি আরও এক দৃষ্টিতে- স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রান্তরে দাঁড়িয়ে, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শ্বাস নিতে নিতে। ৫০ বছর পেরিয়েছে, তবু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাঠামোগত শোষণের শিকার হওয়ার কাল শেষ হয়নি। ৫০ বছর আগে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মাত্রা পেয়েছিল পূর্ববাংলা থেকে পশ্চিমা শাসকরা অর্থ-সম্পদ পাচার করে নিয়ে যায় বলে। আর এখন দেশের সম্পদশালীরা অর্থ পাচার করলেও তা নিয়ে যেন কিছুই করার নেই। তাদের লুণ্ঠন নতুন এক মাত্রা পেয়েছে রাজনৈতিকতার অনুপস্থিতিতে; রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বিচ্ছুরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে; সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে গণতান্ত্রিকভাবে অগণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকে; এমনকি বুর্জোয়া রাজনীতির কথিত সৌন্দর্য নির্বাচন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার কারণে। বিরোধী চেহারার যেসব রাজনৈতিক দলকে জনগণ দেখে আসছে, তারাও ক্ষয়ে পড়েছে ভীষণভাবে- যতটা না নির্যাতনের ভয়ে, তারও বেশি নিজেদেরই দুর্বলতায়; নিজেদেরই অনৈক্যে এবং সবচেয়ে বড় কথা, জনগণের মধ্যে নিজেদের সম্পর্কে যে আস্থাহীনতা; তারা নিজেরাই সৃষ্টি করেছে তারই প্রতিফলে। ফলে রাজনীতি আর রাজনীতিকদের হাতে নেই। যাদের হাতে আছে তাদের ছায়ায় সংঘবদ্ধ হয়ে আছে আসলে কর্মী-সংগঠক নামের বিত্তসন্ধানী এক ঝাঁক শিক্ষার্থী তরুণ।
এমন প্রেক্ষাপটে নাগরিক অধিকার সংকুচিত হয়েছে ২০২১ সালেও। সাংবাদিক নাওমি ক্লেইন যে বলে থাকেন 'শক ডকট্রিন'-এর কথা; বলে থাকেন অর্থনীতিবিদ মিলটন ফ্রিডম্যানের তত্ত্বাবধানে দেশ-দশ-সমাজের সংকটকে শাসক শ্রেণির সুবর্ণ সুযোগ করে তোলার যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক থেরাপির কথা, যার যাত্রা শুরু চিলি থেকে আর এখন যে মতবাদের সুবিধাভোগী খোদ যুক্তরাষ্ট্রও, সেই 'শক থেরাপি' গত দুই বছর ধরে বেশ উদ্দামভাবেই ব্যবহূত হচ্ছে বাংলাদেশে। কভিড মহামারির অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে, শঙ্কা আর আবেগকে ব্যবহার করে সংকুচিত করা হচ্ছে মানুষের গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার। এমনকি লুণ্ঠনও করা হচ্ছে অর্থ- কখনও দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে, কখনও কর্মহীন করে ফেলার কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে কম মজুরিতে কাজ করানোর মধ্য দিয়ে, কখনও সম্পদ পাচার করে। দেশে সার্বিক মূল্যস্ম্ফীতি ২০২১-এ ছিল ৬ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু কোনো কোনো নিত্যপণ্যের মূল্য ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে আর সরকার যে নীরবতা দেখিয়েছে, তাতে মনে হয়েছে, সরকার পারে শুধু জনগণের সঙ্গে। তাই চাল-ডাল থেকে শুরু করে জ্বালানি তেল ও পরিবহন, সবখানেই মূল্যের ঊর্ধ্বগতির জোয়াল টানতে হয়েছে নিম্নবিত্তদের। না,- মধ্যবিত্তও বাদ পড়েনি এই জোয়াল টানা থেকে। করোনার সুবাদে মধ্যবিত্ত মুখাপেক্ষী হয়েছে ই-কমার্সের। কিন্তু ই-কমার্সের নামে প্রতারণার নতুন জগতে হাবুডুবু খেতে হয়েছে তাকে।
অধিকারহীন, কণ্ঠস্বরহীন এসব মানুষ অর্থনৈতিকভাবে যে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে এবং উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে; আমরা জানি না, তার সালতামামি কী করে লেখা যায়। কী করেই বা বলা যায় সেই সংগ্রামশীলতার কথা। গ্রামকে ২০২১ সালে এসে শহরের মতো করে ফেলার দাবি করা হয়েছে। যার প্রকৃত অর্থ এই, শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সুবাদে গ্রামগুলো এখন 'শোষণের পশ্চাদ্ভূমি' হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে। নগর তার নিজের প্রয়োজনেই গ্রামকে নিজের কাছে নিয়ে আসছে; গ্রামের প্রয়োজনে নয়। তদুপরি গ্রাম এখনও যে অর্থনীতির কত বড় আধার, তার প্রমাণ আরেকবার মিলেছে ২০২১ সালে। করোনাজনিত পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে ব্যাপক দরিদ্র মানুষ ফিরে গেছে গ্রামে। বছরের শেষদিকে প্রকাশিত ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পারটিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক যৌথ গবেষণা জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যের কারণে নগরের ২৮ শতাংশ মানুষ গ্রামে চলে যায়। তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশ পরে নগরে ফিরে এলেও ১০ শতাংশ এখনও ফেরেনি। এখনও গ্রাম বহন করছে তাদের। বেকারত্ব গ্রামেও বেড়েছে বটে; কিন্তু উৎপাদনশীলতা কমেনি গ্রামের কৃষির। নগরের মতো তীব্রভাবে না হোক, করোনা গ্রামকেও স্পর্শ করেছে। তা ছাড়াও স্পর্শ করেছে গ্রীষ্ফ্মকালে বয়ে যাওয়া অগ্নিহাওয়া। যার ফলে দেশের ১২টি জেলার প্রায় এক লাখ টন ধানের চাল মাঠেই ঝলসে গেছে। আবার বছরের শেষে এসে 'জাওয়াদ'-এর প্রভাবে বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে ৩২ জেলার আড়াই লাখ হেক্টর জমির ফসলের। তারপরও খাদ্য উৎপাদন আরও বেড়েছে। যদিও কৃষকের দিকে, গ্রামের দিকে কৃতজ্ঞতা মাখানো চোখে তাকানোর শক্তি আমাদের হয়েছে কিনা, বলা মুশকিল।
তবে দারিদ্র্য বেড়েছে অবিশ্বাস্য রকম। বিআইজিডি ও পিপিআরসির ওই জরিপেই দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চে জরিপকারীরা নতুন দরিদ্র হিসেবে খুঁজে পেয়েছিলেন দুই কোটি ৪৫ লাখ জনকে। কিন্তু অক্টোবরের দিকে দেখা গেছে, নতুন দরিদ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ২৪ লাখে। যার অর্থ, ৭৯ লাখ দরিদ্র বেড়েছে মাত্র ছয় মাসে। দরিদ্র যেমন বেড়েছে, তেমনি ধনীও বেড়েছে। সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স জানাচ্ছে, বাংলাদেশে ধনী বাড়ছে এখন ১১ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক জানাচ্ছে, করোনার দেড় বছরে নতুন করে কোটিপতি হয়েছেন ১৭ হাজার ২৯৩ জন। শুধু গত তিন মাসেই কোটিপতি বেড়েছে ৩২১ জন! এটি একটি বড় প্রশ্ন- অর্থনীতিতে অবদান রাখার মধ্য দিয়ে তারা ধনী হচ্ছেন, নাকি দুর্বৃত্তায়ন ও লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে? শুধু আয় বৈষম্যই বাড়ছে না; বাড়ছে ব্যয় বৈষম্যও। গরিব মানুষের আয়ের প্রায় সবটুকুই চলে যাচ্ছে খাদ্য কিনতে।
দেশের যা কিছু সাফল্য- বাস্তবায়নের শেষপ্রান্তে থাকা পদ্মা সেতু, রাজধানীর বুকে দৃশ্যমান হতে থাকা মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল আর বাস র্যাপিড ট্রানজিট; সংশয় ও সন্দেহ কোনোটিই নেই যে, এসব আমাদের আশান্বিত করে; উন্নয়ন কার্যক্রম পরিকল্পনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে গর্বিত করে। আর এ কারণেই মানুষ এখনও উন্নয়ন কার্যক্রমের দীর্ঘমেয়াদি অব্যবস্থাপনাজনিত ধকল সহ্য করে চলেছে, বিশেষত রাজধানীতে। উন্নতি আর দুর্গতি হাত ধরাধরি করে উপস্থিত হয়েছে নগরবাসীর সামনে। দুটোকেই মেনে নিতে হচ্ছে নিরুপায় নাগরিকদের। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও ক্রীড়ায় নারীদের আশা-জাগানিয়া এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকাও অনুপ্রাণিত করেছে সবাইকে।
অর্থনীতিবিদরা ২০২১ সালকে বলছেন ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে তা অস্বীকার করার উপায়ও নেই। যদিও পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বলছে, করোনা সংক্রমণের ঢেউ বারবার আঘাত হানলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। ভোগ, বিপণন, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো ও উন্নয়নের সার্বিক কার্যক্রমও বাড়ছে। কিন্তু উন্নয়ন কার্যক্রম সোপানের যত শীর্ষেই পৌঁছাক না কেন, তা প্রতিনিয়ত ম্লান হয়ে যাচ্ছে মানবাধিকারহীনতায়; নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত হয়ে আসায়। 'রাজনীতি অর্থনীতির ঘনীভূত রূপ'- এ কথায় সত্যতা যদি আংশিকও থাকে, তা হলে বলতে হয়, আমরা আসলে দাঁড়িয়ে আছি ভয়ানক এক খাদের কিনারে। কারণ বছর শেষ হচ্ছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে। বিশ্বমোড়লদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের প্রভাব বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন খুবই স্পষ্ট। এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য রাষ্ট্রপতি সংলাপ আহ্বান করেছিলেন; কিন্তু সেই সংলাপে অংশ নিচ্ছে না দেশের একটি শক্তিশালী বিরোধী দল বিএনপি, অন্যতম বামপন্থি দল বাসদ ও সিপিবি। যারা অংশ নিয়েছে, তাদের পরামর্শও কতটুকু রাখা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু শিক্ষক সমিতির নির্বাচন থেমে থাকেনি। যদিও থমকে আছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ছাত্র রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়নের থাবায় কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। তারপরও শিক্ষার্থীরা বারবার বিচ্ছিন্নভাবে রাজপথে নেমে এসেছে ২০২১ সালে। অন্যদিকে, এক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনই এটি বুঝিয়ে দিয়েছে- সরকারি দল আওয়ামী লীগের দলের ভেতরের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিকতা আরও নিম্নমুখী হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে ৬৮৮টি রাজনৈতিক সংহিসতার ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে ১৩০ জনের। আহত হয়েছেন আট হাজার ৫৯৪ জন। এই ১১ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু ঘটেছে ৬৭ জনের। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ছয়জনেরও বেশি! ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ২৪৭ টি। ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে ৪৬টি; আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে নয়টি। এ সময় ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে ২৮৬টি। স্বামীর নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ২১৩ নারী। ১৯৩ জন সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন।
এ বছর যে প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে যাওয়ার বছর- এতে কোনো সংশয় নেই। আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি জি-ফাইভের দুয়ারে, যা নিয়ে একাডেমিশিয়ানদের মধ্যে তীব্র বিতর্কও রয়েছে। তবে সংশয় আর গ্লানিটা সৃষ্টি হয় তখনই, যখন দেখা যায়, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে নাগরিক অধিকার সংকুচিত করা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ণ করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার কাজে। এই এক বছরে বেশ কয়েকটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নাগরিকদের একাংশকে বিমল আনন্দ দিয়েছে, একাংশকে শিষ্টাচারহীনতার কারণে উদ্বিগ্ন করেছে। এসব থেকে দুর্বৃত্তায়ন, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি ধরনও আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু আরও বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব ধারণ করা অডিও কীভাবে ফাঁস হচ্ছে, কারা করছে, কোন পরিস্থিতিতে করছে, কেন করছে- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার ঔচিত্যবোধ যেন বুদ্ধিজীবীরাও হারিয়ে ফেলেছেন। ২০২১ সালের শেষে আমরা তাই দাঁড়িয়ে আছি এক 'উইন টু উইন' (নাকি 'ডিফিট টু ডিফিট'?) পরিস্থিতিতে। দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে 'রোল মডেল' হয়ে উঠেছে- এ কথা বলব; নাকি বলব, গণতন্ত্রের সংকট তৈরি হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, মানুষ বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা হারিয়েছে- সেটি বোধ করি ব্যক্তির স্বাধীন অভিমতের ওপরই ছেড়ে দেওয়া ভালো। কারণ বাংলাদেশ ২০২১ সালের পুরোটাই এগিয়ে চলেছে উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিকদের অধিকার সংকোচনের মধ্য দিয়ে। পুরোনো বছরকে আমাদের বিদায় দিতে হচ্ছে এমন অসংখ্য পরস্পরবিরোধিতা নিয়ে; গণতন্ত্র-অগণতন্ত্রের ঝগড়া নিয়ে, যদিও আশার তো কখনও মৃত্যু হয় না। আমাদের নিশ্চয় এ আশাও রয়েছে- নতুন বছরে আমাদের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা নতুন আদল পাবে।
বিষয়টি আশার, আবার হতাশ্বাসেরও বটে। বিশেষ করে এ বছরটিকে যদি আমরা দেখি আরও এক দৃষ্টিতে- স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রান্তরে দাঁড়িয়ে, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শ্বাস নিতে নিতে। ৫০ বছর পেরিয়েছে, তবু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাঠামোগত শোষণের শিকার হওয়ার কাল শেষ হয়নি। ৫০ বছর আগে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মাত্রা পেয়েছিল পূর্ববাংলা থেকে পশ্চিমা শাসকরা অর্থ-সম্পদ পাচার করে নিয়ে যায় বলে। আর এখন দেশের সম্পদশালীরা অর্থ পাচার করলেও তা নিয়ে যেন কিছুই করার নেই। তাদের লুণ্ঠন নতুন এক মাত্রা পেয়েছে রাজনৈতিকতার অনুপস্থিতিতে; রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বিচ্ছুরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে; সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে গণতান্ত্রিকভাবে অগণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকে; এমনকি বুর্জোয়া রাজনীতির কথিত সৌন্দর্য নির্বাচন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার কারণে। বিরোধী চেহারার যেসব রাজনৈতিক দলকে জনগণ দেখে আসছে, তারাও ক্ষয়ে পড়েছে ভীষণভাবে- যতটা না নির্যাতনের ভয়ে, তারও বেশি নিজেদেরই দুর্বলতায়; নিজেদেরই অনৈক্যে এবং সবচেয়ে বড় কথা, জনগণের মধ্যে নিজেদের সম্পর্কে যে আস্থাহীনতা; তারা নিজেরাই সৃষ্টি করেছে তারই প্রতিফলে। ফলে রাজনীতি আর রাজনীতিকদের হাতে নেই। যাদের হাতে আছে তাদের ছায়ায় সংঘবদ্ধ হয়ে আছে আসলে কর্মী-সংগঠক নামের বিত্তসন্ধানী এক ঝাঁক শিক্ষার্থী তরুণ।
এমন প্রেক্ষাপটে নাগরিক অধিকার সংকুচিত হয়েছে ২০২১ সালেও। সাংবাদিক নাওমি ক্লেইন যে বলে থাকেন 'শক ডকট্রিন'-এর কথা; বলে থাকেন অর্থনীতিবিদ মিলটন ফ্রিডম্যানের তত্ত্বাবধানে দেশ-দশ-সমাজের সংকটকে শাসক শ্রেণির সুবর্ণ সুযোগ করে তোলার যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক থেরাপির কথা, যার যাত্রা শুরু চিলি থেকে আর এখন যে মতবাদের সুবিধাভোগী খোদ যুক্তরাষ্ট্রও, সেই 'শক থেরাপি' গত দুই বছর ধরে বেশ উদ্দামভাবেই ব্যবহূত হচ্ছে বাংলাদেশে। কভিড মহামারির অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে, শঙ্কা আর আবেগকে ব্যবহার করে সংকুচিত করা হচ্ছে মানুষের গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার। এমনকি লুণ্ঠনও করা হচ্ছে অর্থ- কখনও দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে, কখনও কর্মহীন করে ফেলার কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে কম মজুরিতে কাজ করানোর মধ্য দিয়ে, কখনও সম্পদ পাচার করে। দেশে সার্বিক মূল্যস্ম্ফীতি ২০২১-এ ছিল ৬ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু কোনো কোনো নিত্যপণ্যের মূল্য ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে আর সরকার যে নীরবতা দেখিয়েছে, তাতে মনে হয়েছে, সরকার পারে শুধু জনগণের সঙ্গে। তাই চাল-ডাল থেকে শুরু করে জ্বালানি তেল ও পরিবহন, সবখানেই মূল্যের ঊর্ধ্বগতির জোয়াল টানতে হয়েছে নিম্নবিত্তদের। না,- মধ্যবিত্তও বাদ পড়েনি এই জোয়াল টানা থেকে। করোনার সুবাদে মধ্যবিত্ত মুখাপেক্ষী হয়েছে ই-কমার্সের। কিন্তু ই-কমার্সের নামে প্রতারণার নতুন জগতে হাবুডুবু খেতে হয়েছে তাকে।
অধিকারহীন, কণ্ঠস্বরহীন এসব মানুষ অর্থনৈতিকভাবে যে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে এবং উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে; আমরা জানি না, তার সালতামামি কী করে লেখা যায়। কী করেই বা বলা যায় সেই সংগ্রামশীলতার কথা। গ্রামকে ২০২১ সালে এসে শহরের মতো করে ফেলার দাবি করা হয়েছে। যার প্রকৃত অর্থ এই, শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সুবাদে গ্রামগুলো এখন 'শোষণের পশ্চাদ্ভূমি' হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে। নগর তার নিজের প্রয়োজনেই গ্রামকে নিজের কাছে নিয়ে আসছে; গ্রামের প্রয়োজনে নয়। তদুপরি গ্রাম এখনও যে অর্থনীতির কত বড় আধার, তার প্রমাণ আরেকবার মিলেছে ২০২১ সালে। করোনাজনিত পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে ব্যাপক দরিদ্র মানুষ ফিরে গেছে গ্রামে। বছরের শেষদিকে প্রকাশিত ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পারটিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক যৌথ গবেষণা জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যের কারণে নগরের ২৮ শতাংশ মানুষ গ্রামে চলে যায়। তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশ পরে নগরে ফিরে এলেও ১০ শতাংশ এখনও ফেরেনি। এখনও গ্রাম বহন করছে তাদের। বেকারত্ব গ্রামেও বেড়েছে বটে; কিন্তু উৎপাদনশীলতা কমেনি গ্রামের কৃষির। নগরের মতো তীব্রভাবে না হোক, করোনা গ্রামকেও স্পর্শ করেছে। তা ছাড়াও স্পর্শ করেছে গ্রীষ্ফ্মকালে বয়ে যাওয়া অগ্নিহাওয়া। যার ফলে দেশের ১২টি জেলার প্রায় এক লাখ টন ধানের চাল মাঠেই ঝলসে গেছে। আবার বছরের শেষে এসে 'জাওয়াদ'-এর প্রভাবে বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে ৩২ জেলার আড়াই লাখ হেক্টর জমির ফসলের। তারপরও খাদ্য উৎপাদন আরও বেড়েছে। যদিও কৃষকের দিকে, গ্রামের দিকে কৃতজ্ঞতা মাখানো চোখে তাকানোর শক্তি আমাদের হয়েছে কিনা, বলা মুশকিল।
তবে দারিদ্র্য বেড়েছে অবিশ্বাস্য রকম। বিআইজিডি ও পিপিআরসির ওই জরিপেই দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চে জরিপকারীরা নতুন দরিদ্র হিসেবে খুঁজে পেয়েছিলেন দুই কোটি ৪৫ লাখ জনকে। কিন্তু অক্টোবরের দিকে দেখা গেছে, নতুন দরিদ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ২৪ লাখে। যার অর্থ, ৭৯ লাখ দরিদ্র বেড়েছে মাত্র ছয় মাসে। দরিদ্র যেমন বেড়েছে, তেমনি ধনীও বেড়েছে। সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স জানাচ্ছে, বাংলাদেশে ধনী বাড়ছে এখন ১১ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক জানাচ্ছে, করোনার দেড় বছরে নতুন করে কোটিপতি হয়েছেন ১৭ হাজার ২৯৩ জন। শুধু গত তিন মাসেই কোটিপতি বেড়েছে ৩২১ জন! এটি একটি বড় প্রশ্ন- অর্থনীতিতে অবদান রাখার মধ্য দিয়ে তারা ধনী হচ্ছেন, নাকি দুর্বৃত্তায়ন ও লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে? শুধু আয় বৈষম্যই বাড়ছে না; বাড়ছে ব্যয় বৈষম্যও। গরিব মানুষের আয়ের প্রায় সবটুকুই চলে যাচ্ছে খাদ্য কিনতে।
দেশের যা কিছু সাফল্য- বাস্তবায়নের শেষপ্রান্তে থাকা পদ্মা সেতু, রাজধানীর বুকে দৃশ্যমান হতে থাকা মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল আর বাস র্যাপিড ট্রানজিট; সংশয় ও সন্দেহ কোনোটিই নেই যে, এসব আমাদের আশান্বিত করে; উন্নয়ন কার্যক্রম পরিকল্পনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে গর্বিত করে। আর এ কারণেই মানুষ এখনও উন্নয়ন কার্যক্রমের দীর্ঘমেয়াদি অব্যবস্থাপনাজনিত ধকল সহ্য করে চলেছে, বিশেষত রাজধানীতে। উন্নতি আর দুর্গতি হাত ধরাধরি করে উপস্থিত হয়েছে নগরবাসীর সামনে। দুটোকেই মেনে নিতে হচ্ছে নিরুপায় নাগরিকদের। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও ক্রীড়ায় নারীদের আশা-জাগানিয়া এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকাও অনুপ্রাণিত করেছে সবাইকে।
অর্থনীতিবিদরা ২০২১ সালকে বলছেন ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে তা অস্বীকার করার উপায়ও নেই। যদিও পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বলছে, করোনা সংক্রমণের ঢেউ বারবার আঘাত হানলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। ভোগ, বিপণন, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো ও উন্নয়নের সার্বিক কার্যক্রমও বাড়ছে। কিন্তু উন্নয়ন কার্যক্রম সোপানের যত শীর্ষেই পৌঁছাক না কেন, তা প্রতিনিয়ত ম্লান হয়ে যাচ্ছে মানবাধিকারহীনতায়; নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত হয়ে আসায়। 'রাজনীতি অর্থনীতির ঘনীভূত রূপ'- এ কথায় সত্যতা যদি আংশিকও থাকে, তা হলে বলতে হয়, আমরা আসলে দাঁড়িয়ে আছি ভয়ানক এক খাদের কিনারে। কারণ বছর শেষ হচ্ছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে। বিশ্বমোড়লদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের প্রভাব বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন খুবই স্পষ্ট। এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য রাষ্ট্রপতি সংলাপ আহ্বান করেছিলেন; কিন্তু সেই সংলাপে অংশ নিচ্ছে না দেশের একটি শক্তিশালী বিরোধী দল বিএনপি, অন্যতম বামপন্থি দল বাসদ ও সিপিবি। যারা অংশ নিয়েছে, তাদের পরামর্শও কতটুকু রাখা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু শিক্ষক সমিতির নির্বাচন থেমে থাকেনি। যদিও থমকে আছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ছাত্র রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়নের থাবায় কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। তারপরও শিক্ষার্থীরা বারবার বিচ্ছিন্নভাবে রাজপথে নেমে এসেছে ২০২১ সালে। অন্যদিকে, এক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনই এটি বুঝিয়ে দিয়েছে- সরকারি দল আওয়ামী লীগের দলের ভেতরের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিকতা আরও নিম্নমুখী হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে ৬৮৮টি রাজনৈতিক সংহিসতার ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে ১৩০ জনের। আহত হয়েছেন আট হাজার ৫৯৪ জন। এই ১১ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু ঘটেছে ৬৭ জনের। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ছয়জনেরও বেশি! ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ২৪৭ টি। ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে ৪৬টি; আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে নয়টি। এ সময় ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে ২৮৬টি। স্বামীর নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ২১৩ নারী। ১৯৩ জন সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন।
এ বছর যে প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে যাওয়ার বছর- এতে কোনো সংশয় নেই। আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি জি-ফাইভের দুয়ারে, যা নিয়ে একাডেমিশিয়ানদের মধ্যে তীব্র বিতর্কও রয়েছে। তবে সংশয় আর গ্লানিটা সৃষ্টি হয় তখনই, যখন দেখা যায়, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে নাগরিক অধিকার সংকুচিত করা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ণ করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার কাজে। এই এক বছরে বেশ কয়েকটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নাগরিকদের একাংশকে বিমল আনন্দ দিয়েছে, একাংশকে শিষ্টাচারহীনতার কারণে উদ্বিগ্ন করেছে। এসব থেকে দুর্বৃত্তায়ন, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি ধরনও আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু আরও বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব ধারণ করা অডিও কীভাবে ফাঁস হচ্ছে, কারা করছে, কোন পরিস্থিতিতে করছে, কেন করছে- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার ঔচিত্যবোধ যেন বুদ্ধিজীবীরাও হারিয়ে ফেলেছেন। ২০২১ সালের শেষে আমরা তাই দাঁড়িয়ে আছি এক 'উইন টু উইন' (নাকি 'ডিফিট টু ডিফিট'?) পরিস্থিতিতে। দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে 'রোল মডেল' হয়ে উঠেছে- এ কথা বলব; নাকি বলব, গণতন্ত্রের সংকট তৈরি হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, মানুষ বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা হারিয়েছে- সেটি বোধ করি ব্যক্তির স্বাধীন অভিমতের ওপরই ছেড়ে দেওয়া ভালো। কারণ বাংলাদেশ ২০২১ সালের পুরোটাই এগিয়ে চলেছে উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিকদের অধিকার সংকোচনের মধ্য দিয়ে। পুরোনো বছরকে আমাদের বিদায় দিতে হচ্ছে এমন অসংখ্য পরস্পরবিরোধিতা নিয়ে; গণতন্ত্র-অগণতন্ত্রের ঝগড়া নিয়ে, যদিও আশার তো কখনও মৃত্যু হয় না। আমাদের নিশ্চয় এ আশাও রয়েছে- নতুন বছরে আমাদের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা নতুন আদল পাবে।
মন্তব্য করুন