ফেঁসে যাওয়া নেতাদের তালিকায় সবচেয়ে আলোচিত পদত্যাগী তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। একজন চিত্রনায়িকার সঙ্গে অশ্নীল কথাবার্তা ও ধর্ষণের হুমকিসংবলিত ফোনালাপের অডিও ফাঁস হওয়ার জের ধরে ৬ ডিসেম্বর মুরাদকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন। একই দিন জামালপুর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ৮ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মুরাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। ৯ ডিসেম্বর রাতে কানাডায় যেতে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে উপস্থিত হন তিনি। মধ্যরাতে ফ্লাইটটি ঢাকা ছেড়ে গেলেও কানাডার টরন্টোর পিয়ারসন বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেয় দেশটির বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি। পরে দুবাই হয়ে ১২ ডিসেম্বর এমিরেটসের ফ্লাইটে দেশে ফিরতে বাধ্য হন তিনি। চুপিসারে বিমানবন্দর ত্যাগ করে রাজধানীর উত্তরার ভাইয়ের বাসায় চলে যান।
এর আগেও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন মুরাদ হাসান। কয়েকটি মামলার পর এখন সংসদ সদস্য পদ হারানোর ঝুঁকিতেও পড়েছেন ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসন থেকে নির্বাচিত মুরাদ হাসান।
একইভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করে ফেঁসে যান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণকৃত জাহাঙ্গীর আলমের ওই কটূক্তির ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা জাহাঙ্গীরকে দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিস্কারের দাবি জানান। অবশ্য ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি 'সুপার এডিট' করা বলে বারবার দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম। পরে ৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে জাহাঙ্গীরকে ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শোকজ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই শোকজ নোটিশের জবাব দিয়ে ক্ষমা চাইলেও রেহাই মেলেনি তার। ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীরকে দলীয় পদ থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ নভেম্বর জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
অন্যদিকে জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে পদ খোয়ানোর পাশাপাশি গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর মেয়র আব্বাস আলী। কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদের পাশাপাশি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও। সবশেষে ১ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকার কাকরাইলের হোটেল রাজমণি ঈশা খাঁ থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারও হন আব্বাস আলী। এখন তিনি জেলখানায় রয়েছেন।

বিষয় : আ'লীগের তিন নেতা

মন্তব্য করুন