বিদায়ী বছরে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকরা আগাম টাকা পরিশোধ করে পণ্য পাননি। টাকাও ফেরত পাননি। আবার এসব প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবরাহকারীদেরও বড় অঙ্কের পাওনা সৃষ্টি হয়। পণ্য বা টাকা পাওয়ার দাবিতে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ভাঙচুর, মালিকদের পালিয়ে দেশত্যাগ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।
ই-কমার্সে গ্রাহকদের ভোগান্তির পেছনে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে। ই-ভ্যালি ব্যাপক ছাড়ে পণ্য বিক্রি শুরু করে। বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। সক্ষমতার তুলনায় বেশি অর্ডার নিয়ে ক্রেতাদের টাকা আটকে ফেলে ই-ভ্যালি প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষত বাজার মূল্যের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমদামে মোটরসাইকেল বিক্রির লোভনীয় অফারে ক্রেতাদের থেকে আগাম টাকা নেয়। আবার বিশাল ছাড়ে পণ্য কিনে বিক্রির জন্য এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এখানে লগ্নি করতে থাকে। ধীরে ধীরে সারাদেশের কয়েক লাখ মানুষের টাকা আটকে পড়ে এ ফাঁদে।
এই চিত্র প্রথমে তেমন কারোর নজরে আসেনি। পর্দা ফাঁস হয় যখন আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। এতে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি যে পরিমাণ অর্ডার নিয়েছে, সেই পরিমাণ পণ্য নেই। আবার তাদের কাছে ক্রেতাদের আগাম পরিশোধ করা টাকাও নেই। এ খবর প্রকাশের পর একের পর এক থলের বেড়াল বের হতে থাকে। একে একে ই-অরেঞ্জ, ধামাকাশপ, কিউকম, প্রিয়শপ, সিরাজগঞ্জ বিডি, আলাদীনের প্রদীপ, দালাল প্লাস, রিংআইডি, আনন্দের বাজার, ২৪টিকেটি, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস ডটকম, র‌্যাপিড ক্যাশ, নিরাপদ, উঠাও ক্যাশ এবং ডটলাইন (প্লে অ্যান্ড উইন), আলেশা মার্টের মতো প্রতিষ্ঠান একই কাজ করছে বলে খবর বের হতে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে লাখ লাখ মানুষের শত শত কোটি টাকা আটকে গেছে।
গ্রাহকরা সময়মতো পণ্য না পেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ই-ক্যাবে অভিযোগ করতে থাকেন। সরকারও নড়েচড়ে বসে। অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্রেতারা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধ করে ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনাও ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিক পালিয়ে দেশ ছাড়েন। গ্রেপ্তার হন অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি ব্যাংক তাদের কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা না করতে গ্রাহকদের সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি দেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স নীতিমালায় যুক্ত করে নতুন নির্দেশিকা। এরপর ভাটা পড়ে ই-কমার্স ব্যবসায়, যা এখনও চলছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এক-দেড় দশক আগে যুবক, ডেসটিনিসহ এমএলএমকেন্দ্রিক আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মতোই ই-কমার্সে প্রতারিত লাখ লাখ গ্রাহকেরও পাওনা অর্থ ফেরতের আশায় দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ, কেলেঙ্কারিতে জড়িত ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর ব্যাংক হিসাবে টাকা নেই। নেই কোনো স্থায়ী সম্পদ। অন্যদিকে এসব কোম্পানির কাছে গ্রাহকরা কত টাকা পাবেন সে বিষয়ে সরকারের কাছে তথ্য নেই।