- বাংলাদেশ
- ফুটপাতের হকারদের রোজগারে ‘ভাগ’ সনি-প্রভাতীর
ফুটপাতের হকারদের রোজগারে ‘ভাগ’ সনি-প্রভাতীর

ফুটপাতে বেচাকেনা (ফাইল ফটো)
কলেজের সামনের ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ দোকানের আয়ে চলে হকারদের সংসার। অথচ দীর্ঘদিন তাঁদের এ রোজগারের অর্থ পকেটে ভরছেন রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স (গার্হস্থ্য অর্থনীতি) কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শারমিন সুলতানা সনি ও সাধারণ সম্পাদক আকলিমা আক্তার প্রভাতী। সমকালের অনুসন্ধানে হকার ছাড়াও তাঁদের বিরুদ্ধে কলেজের অদূরে ফিলিং স্টেশনঘেঁষা অস্থায়ী লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের সত্যতা মিলেছে।
ফুটপাতের সামনে দোকান বসলে চলাচলে অসুবিধা হবে কিংবা লেগুনা স্ট্যান্ড থাকলে পরিবহন শ্রমিকরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করবেন– এমন কারণ দেখিয়ে তাঁদের ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে আসছেন সনি ও প্রভাতী। বাধ্য হয়ে হকার ও লেগুনাচালকদের পক্ষে লাইনম্যানরা টাকা তুলে প্রতি সপ্তাহে দুই নেত্রীকে দিয়ে আসেন। সম্প্রতি সরকারের একটি সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের এই দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে নিউমার্কেট মোড় থেকে ইডেন মহিলা কলেজ পর্যন্ত মিরপুর রোডের পূর্বপাশে ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার তথ্য এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হকারদের লাইনম্যান মো. সোহেল টাকা তোলেন। এরপর সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ৩ হাজার টাকা করে মাসিক মোট ১২ হাজার টাকা সনি ও প্রভাতীর হাতে দিয়ে আসেন। একইভাবে নিউমার্কেট মোড়ে ‘পথের বন্ধু ফিলিং স্টেশনের’ সামনে লেগুনা স্ট্যান্ড পরিবহনের লাইনম্যান মো. মোহসিন প্রতিদিন চাঁদার টাকা তুলে অন্যতম লেগুনা মালিক মো. মানিক মৃধাকে দেন। তিনি সপ্তাহে ৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে মাসিক ১৪ হাজার টাকা কলেজের দুই নেত্রীকে দিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ফুটপাতের ওপর ভাসমান দোকান বসলে কলেজের মেয়েদের চলাচলে অসুবিধা হবে– এমন কারণ দেখিয়ে তাঁদের উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন ছাত্রলীগের দুই নেত্রী। হকাররা নিরুপায় হয়ে টাকা দেন। একইভাবে কলেজের সামনে দিয়ে লেগুনা চলাচলের সময় চালক ও তাঁদের সহকারীরা (হেলপার) ছাত্রীদের যৌন হয়রানি কিংবা খারাপ আচরণ করেন– এমন অভিযোগ এনে লেগুনা চলতে না দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়।
চাঁদা সংগ্রহকারীরা জানান, ফুটপাতের হকার ও লেগুনাচালকদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে সপ্তাহের বৃহস্পতিবার কিংবা সুবিধাজনক দিনে সনি ও প্রভাতী– যে কোনো একজনের কাছে দিয়ে আসেন তাঁরা। মাসে দু’জনকে ২০ হাজার টাকার বেশি দিতে হয়। শুধু ফুটপাত কিংবা লেগুনা থেকে নয়, কলেজে কোনো কাজ হলে তার ভাগও এ দুই নেত্রীকে দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি চাঁদা না দেওয়ায় কলেজের শেখ হাসিনা হলের সংস্কারকাজ বন্ধ করে দেয় সনি-প্রভাতী গং। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
জানতে চাইলে লেগুনা মালিক মানিক মৃধা বলেন, ‘এসব আমি দেখি না। লাইনম্যান জানে, কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়ে কাকে দিতে হবে। ফোনে এত সব বলা সম্ভব নয়।’ আলাপের মধ্যেই দেখা করতে চেয়ে কল কেটে দেন তিনি। পরে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শারমিন সুলতানা সনি বলেন, ‘এসব মিথ্যা, বানোয়াট। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই সেখানে দোকান বসে। কলেজের মেয়েদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা ভাসমান দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড সরানোসহ ৮ দাবি জানিয়ে সম্প্রতি কলেজ প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গেও দেখা করব। চাঁদাবাজি করলে তো এসব দাবি জানাতাম না।’ আকলিমা আক্তার প্রভাতী বলেন, ‘এসব অভিযোগ কে দেয়? আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করি। ক্যাম্পাসের সামনে প্রধানমন্ত্রীর ম্যুরাল করেছি। বহিরাগতরা এটি যাতে নষ্ট করতে না পারে, ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদসহ প্রশাসনকে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছি। আমরা কখনোই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানু দু’জনেই জানান, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবেন। সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন।
মন্তব্য করুন