- বাংলাদেশ
- ঢাকায় বসে ভোটে অনিয়ম ঠেকাল ইসি
সিসি ক্যামেরায় দিনভর গাজীপুরে চোখ
ঢাকায় বসে ভোটে অনিয়ম ঠেকাল ইসি

রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করেন সিইসিসহ কমিশনাররা-ফোকাস বাংলা
ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৮টা ছুঁইছুঁই। একে একে চালু হয়ে গেল সব মনিটর। গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনে ভোট গ্রহণের চিত্র ভেসে উঠল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের পঞ্চম তলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ১৮টি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে। এভাবেই গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেলে পর্যন্ত জিসিসির ৪৮০টি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট গ্রহণের চিত্র সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কোথাও কোনো অনিয়ম বা অব্যবস্থা দেখলেই ফোন করা হয় সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তা
ও প্রশাসনকে।
ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ার পর সারাদিনের কর্মযজ্ঞ শেষে বিকেলে তাই নির্বাচন কর্মকর্তাদের মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর জানান, সিসি ক্যামেরা থাকায় অনিয়ম করতে অনেকে ভয় পেয়েছে। এটাই আমাদের সফলতা।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একটি কেন্দ্রে প্রথম অনিয়ম ধরা পড়ে। ১০১ নম্বর কেন্দ্রে বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঢাকায় বসে এ অনিয়ম দেখতে পান ইসি রাশিদা সুলতানা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে ফোন করে বলেন, ‘১০১ নম্বর কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে পাঞ্জাবি পরা একজন লোক বসে আছেন। তিনি কারও কথা শুনছেন না, বেরও হচ্ছেন না। ভোটারদের জোর করে ভোট দেওয়াচ্ছেন। তাঁর কারণে ভোট গ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত অ্যাকশনে যান, প্রয়োজনে তাঁকে গ্রেপ্তার করুন।’ এ সময় গাজীপুরের ১০১ নম্বর সোনারবান মেমোরিয়াল হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াজ এবং শহরের বি-ব্লকের ১০৩ নম্বর উম্মুল কুরা হিফজ মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে আবু তাহের নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
এ দিন ইসি আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশিদা সুলতানা, আনিছুর রহমান কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। সকল সাড়ে ১০টায় এতে যুক্ত হন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে মোট ৪৪৩৫টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে একসঙ্গে ৪৬৬টির মাধ্যমে সমান সংখ্যক ভোটকক্ষ পর্যবেক্ষণ করা গেছে। প্রতিটি ডিসপ্লে মনিটরে ১০ সেকেন্ড পর পর পর্যায়ক্রমে সবগুলো কেন্দ্রের পরিস্থিতিই দেখা গেছে। তবে নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষণ কক্ষে সাংবাদিকদের সার্বক্ষণিক থাকতে দেওয়া হয়নি। দুই ঘণ্টা পরপর ৮-১০ মিনিটের জন্য ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
সারাদিনে তিনবার ক্যামেরা প্রবেশ করতে দেখা গেছে। বাকি সময় সাংবাদিকরা ওই কক্ষের বাইরে অবস্থান করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাচঘেরা ওই কক্ষের ভেতরে থেকে ‘গ্রেপ্তার করো’, ‘একে ধরো’– এ ধরনের শব্দ ও শোরগোল শোনা যাচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক কক্ষের দরজার সামনে এসে অবস্থান নেন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রবেশ করতে চাইলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। ওই সাংবাদিক এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, ভেতরে কী হচ্ছে তা তো আমরা জানতে পারছি না। ভেতরে শোরগোল পড়ে গেছে। আমরা তা দেখাতে পারছি না। তখন ওই কর্মকর্তা বলেন, কক্ষটি খুব ছোট, সেখানে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ফলে দুই ঘণ্টা পর সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
দুপুর ১২টায় সাংবাদিকরা আবার সিসি ক্যামেরার কক্ষে প্রবেশের অনুমতি চান। তখন নির্বাচন কমিশনের সহকারী জনসংযোগ পরিচালক আশাদুল হক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টেলিফোনে অনুমতি নিয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য ক্যামেরা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেন।
বিকেল ৪টায় সিসি ক্যামেরায় ভোট গ্রহণ পর্যবেক্ষণ শেষ হয়। তার পরও ভোটের ফলাফলে চোখ ছিল নির্বাচন কমিশনের। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ইসি মো. আলমগীর সাংবাদিকদের সামনে আসেন। তখনও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছিল। মো. আলমগীর বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ভোটের সময় শেষ হলেও কেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে যারা উপস্থিত থাকেন, তাঁদের ভোট গ্রহণ করতে হয়। তাই সময় শেষেও ভোট গ্রহণ হচ্ছে।’
সারা দিনে সিসি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুটি কেন্দ্রে এজেন্টরা ভোটারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন; তাদের আটক করা হয়েছে। আমাদের নজরে অন্যান্য কেন্দ্রে অনিয়মের তথ্য আসেনি। যেটা নজরে এসেছে সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি। চার হাজারের বেশি সিসি ক্যামেরা। একবারে সব দেখা সম্ভব নয়। তবে সিসি ক্যামেরার জন্য অনেকেই অনিয়ম করতে ভয় পেয়েছে, এটাই আমাদের সফলতা।’
জিসিসি নির্বাচন নিয়ে কমিশন সন্তুষ্ট বলেও জানান ইসি আলমগীর। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আমাদের পর্যবেক্ষকরা যে তথ্য পাঠিয়েছে, তাতে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে।’ ভোটে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ইভিএম বুঝতে অনেকের একটু দেরি হয়, সে কারণে দেরি হতে পারে। তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়।
জাতীয় নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা থাকবে কিনা– এ বিষয়ে ইসি আলমগীর বলেন, এটা এখন বলতে পারবো না। যখন তপশিল ঘোষণা হবে, তখন সিদ্ধান্ত হবে। মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো চাপ আছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশি রাষ্ট্র নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। সেটি রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্র বুঝবে। এটা নির্বাচন কমিশনের কিছু নয়।
এর আগে রংপুর সিটি করপোরেশন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ঝিনাইদহ পৌরসভা, জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে গাইবান্ধা-৫ আসনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের দৃশ্য সিসিটিভিতে দেখে মাঝপথে ভোট স্থগিত করে ইসি। পরে সেখানে আবার ভোট গ্রহণ হয়।
মন্তব্য করুন