বাংলাদেশের মানুষ অনেক আগেই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করে আসছে। ২০১৩ সাল থেকে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হচ্ছে। আর ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস হয়। এর পরও স্বাধীনতার ৫২ বছরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা সম্ভব হয়নি। তবে চলতি বছরের ২৫ থেকে ৩১ মার্চ প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সদরদপ্তরে একাত্তরের গণহত্যার আলোকচিত্র প্রদর্শনী করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে অবশ্য ফেব্রুয়ারিতে কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসে (সিএমএইচআর) আবেদন করে বাংলাদেশ।

সরকারি-বেসরকারি এসব উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে বেলা ১১টায় সম্মেলন শুরু হবে। ‘ইউরোপিয়ান ফোরাম ফর বাংলাদেশ’, ‘আমরা একাত্তর’ ও ‘প্রজন্ম ৭১’ আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে আরও বলা হয়, সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, গণহত্যা গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন প্রমুখ বক্তব্য দেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে ত্বরান্বিত করেছেন। এখন একাত্তরে আমাদের ওপর চালানো গণহত্যা ইস্যু আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা ও স্বীকৃতি আদায়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।’

মানবাধিকারকর্মী ও ডাচ্ রাজনীতিক হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, ‘গণহত্যার স্বীকৃতি ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধীদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিতেও স্বীকৃতি প্রয়োজন। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি না হলে বিশ্বে আরও গণহত্যা সংঘটিত হবে। ১৯৭১ সালে গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবার, সাক্ষী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। বিভিন্ন গণহত্যার স্থান পরিদর্শন করব। এখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নেদারল্যান্ডসে ফিরে স্বীকৃতির জন্য পিটিশন ও ক্যাম্পেইন করব। সাক্ষীদের মাধ্যমে ডাচ্ পার্লামেন্টেও বিষয়টি তুলে ধরা হবে।’

আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. অ্যান্থনি হোলস্ল্যাগ বলেন, ‘এ গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে বিভিন্ন দেশের সরকারকে চাপ দিতে হবে। গণহত্যা নিয়ে আরও বৈজ্ঞানিক আলোচনা দরকার।’ সুইস ইন্টারস্ট্র্যাটেজি গ্রুপের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ১৯৭১ সালে এ দেশে কী হয়েছিল– বিশ্বের কাছে তা তুলে ধরা। একই সঙ্গে এ গণহত্যার স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন, তাও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানানো।’

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যা স্বীকৃতি পাওয়ার সব শর্ত পূরণ করে। সুতরাং স্বীকৃতির জন্য আমাদের দাবি অযৌক্তিক নয়। এ দাবির সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইউরোপিয়ান ফোরাম ফর বাংলাদেশ-এর সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া।

পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বক্তারা বলেন, ভবিষ্যতে অন্য কোনো জাতি যাতে গণহত্যার শিকার না হয়, সে জন্য বাংলাদেশে একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। এর মাধ্যমে আরেকটি গণহত্যা ঠেকানো সম্ভব হবে।