
খুলনা ব্যুরো থেকে হাসান হিমালয় জানান, নগরীর ডাকবাংলো, শিববাড়ী মোড়সহ ছোট-বড় শপিংমলে ক্রেতার ভিড় ছিল চাঁদ রাত পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা জানান, পোশাক ছাড়া ঈদের অন্য সব পণ্যের বাজারেই ছিল মন্দাভাব। ঈদে পোশাকের পর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় খাদ্যপণ্য। কিন্তু এ বছর সেমাই, চিনি, পোলাও চাল, মসলার বাজারে আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। পাইকারি গুদামে অনেক পণ্যই অবিক্রিত রয়েছে। স্মার্টফোন বিক্রিও তলানিতে। যদিও রমজানের শেষদিকে তাবদাহ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে এসি বিক্রি। আর পরিবহন ব্যবসা ছিল আগের মতোই জমজমাট।
খুলনা শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিসমিল্লাহ ফেব্রিক্সের মালিক আবুল হাসান বলেন, রমজানের শুরুর দিকে বেচাকেনা একেবারেই কম ছিল। ঈদের আগে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে ঈদে পোশাক বিক্রি গতবারের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম হয়েছে।
খুলনা সম্মিলিত ব্যবসায়ী ঐক্যের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম মাসুম বলেন, আগে ডাকবাংলো মোড়কেন্দ্রিক প্রায় ৩ হাজার দোকানে প্রতি রাতে শত কোটি টাকার লেনদেন হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ভাটা চলছে। এবার ঈদে কম দামি পোশাক বিক্রি হলেও সব দোকানেই রয়ে গেছে বেশি দামেরগুলো।
কালীবাড়ি সড়কে ন্যাশনাল ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক রাইসুল ইসলাম সাদ্দাম জানান, করোনার সময় বাদ দিলে গত ৮-১০ বছরের মধ্যে বেচাকেনায় এমন মন্দা তিনি দেখেননি। ঈদের আগে প্রতিদিন ১৫০-২০০ কার্টুন সেমাই-কিশমিশ বিক্রি হতো। এবার হয়েছে মাত্র ৭-৮ কার্টুন।
তবে ঈদে স্বাভাবিক ছিল পরিবহন ব্যবসা। এনা পরিবহনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক শাহাবুদ্দিন বাবু বলেন, ‘ঈদের আগে ও পরে প্রায় ২০ পরিবহন কোম্পানি ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন ১০ হাজার যাত্রী পরিবহন করে। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালু হওয়ায় যাত্রীর চাপ কিছুটা কম ছিল।’
চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে শৈবাল আচার্য্য জানান, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ছোট-বড় শপিংমলে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, বেচাবিক্রি ভালো হলেও তা আশানুরূপ হয়নি। সাধারণ মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছেন না। ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের প্রভাব পড়েছে ঈদের কেনাকাটায়।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমদ বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলেও মনের মতো ঈদের কেনাকাটা করতে পারেননি অনেকেই। তবে সার্বিকভাবে চট্টগ্রামে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো বিকিকিনি হয়েছে।’ চট্টগ্রাম নিউমার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সাগির বলেন, ‘এবার বেশিরভাগ ক্রেতার মধ্যে কম টাকার পণ্য কেনার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।’
সিলেট ব্যুরো থেকে ফয়সল আহমদ বাবলু জানান, ঈদে সিলেটে বেচাবিক্রি ভালো হয়েছে। নগরীর জিন্দাবাজারের মিলেনিয়াম মার্কেটের ব্যবসায়ী রিপন সিনহা জানান, সবকিছু মোটামুটি স্বাভাবিক থাকায় অন্য বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ বাণিজ্য হয়েছে।
আল হামরা মার্কেটের নীলাচল শাড়ি সেন্টারের মালিক নাজমুল হোসেন বলেন, সিলেটে সবারই ভালো ব্যবসা হয়েছে। তবে মানুষ কম মূল্যের পোশাক বেশি কিনেছেন।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ‘এবার অনেক রেমিট্যান্স আসায় মানুষ স্বজনের জন্য কেনাকাটা বেশি করেছেন। বিদ্যুৎ ঝামেলা না করলে আরও বিক্রি ভালো হতো।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেটের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, ‘এ বছর মার্চে সিলেট বিভাগে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ২৪৬ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার। গেল বছর একই সময়ে এসেছিল ১৪১ দমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার। ঈদের মাস হওয়ায় এপ্রিলে আরও বেশি রেমিট্যান্স আসার কথা।’
রাজশাহী ব্যুরো থেকে সৌরভ হাবিব জানান, রাজশাহীর পোশাক ব্যবসায়ী ও ব্র্যান্ডের শোরুম গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যবসা করেছে। আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, এবার মেয়েদের সারারা, গারারা, নায়রা ডিজাইনের পোশাক ভালো বিক্রি হয়েছে। সপুরা সিল্কের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, ইফতারের পর ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। গতবারের তুলনায় অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে।
বরিশাল ব্যুরো থেকে পুলক চ্যাটার্জি জানান, বাংলা নববর্ষ ও ঈদ ঘিরে বরিশালে ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামহীন না হলে বিক্রি আরও ভালো হতো বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
নগরীর চকবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুর রহিম বলেন, করোনার কারণে পর পর দুই বছর ঈদের কেনাবেচায় মন্দা ছিল। তবে এবার তা কেটে গেছে। সবাই প্রত্যাশা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করতে পেরেছেন।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘বরিশালে নববর্ষ ও ঈদ ঘিরে ব্যবসায়ীরা ৫০০ কোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করেছেন।’
বগুড়া ব্যুরো থেকে এস এম কাওসার জানান, ঈদে বেচাবিক্রির টাকায় পুরো বছর চলেন বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার কাপড় ব্যবসায়ী রহমানিয়া এক্সক্লুসিভের মালিক আবদুল খালেক। কিন্তু এবার ঈদে তেমন বেচাকেনা হয়নি। পুরো মাসে হাত গুটিয়ে বসেছিলেন। বেতন-ভাতা দিতে না পারায় ২৭ কর্মচারীর মধ্যে ১৫ জনকেই ছাঁটাই করতে বাধ্য হন তিনি। আবদুল খালেক বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদ ও বৈশাখ মিলে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করি। এবার ৫০ লাখ টাকার কিছু বিক্রি করতে পেরেছি।’
বগুড়ার অন্যতম লাচ্ছা সেমাই বিক্রির প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল বলেন, গত বছর যেসব ডিলার ২ টন লাচ্ছা নিয়েছিলেন, তাঁরাই আধা টনের একটু বেশি নিয়েছেন। দাম বৃদ্ধির কারণে কমে গেছে বিক্রি।
মন্তব্য করুন