ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

সাংবাদিক শামসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ অব্যাহত

সাংবাদিক শামসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ অব্যাহত

শামসুজ্জামান শামস

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ | ০৯:০৬

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) মামলায় গ্রেপ্তার প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ফের কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এদিকে শামসের মুক্তির দাবিতে সাভারে এক মানববন্ধনে তাঁর মা করিমন নেসা শুধু চোখের পানি ফেলেছেন। বিভিন্ন সংগঠন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিএসএ মামলা দায়ের এবং শামসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে পুলিশের নিরাপত্তায় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে শামসকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার তাঁকে কেরানীগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়েছিল।

কাশিমপুর কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন। কাশিমপুরে আনার পর আবার কেন তাঁকে ঢাকার কারাগারে পাঠানো হলো জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে’ এটা করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আমিনুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক শামসকে গতকাল কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে।

শামসের মুক্তি ও ডিএসএ বাতিলের দাবিতে ঢাকার ধামরাইয়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকার মানুষ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা। মানববন্ধনে তাঁর মা করিমন নেসাসহ অন্য স্বজনরা অংশ নেন।

তবে শামসের মা মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কোনো কথা বলতে পারেননি। শুধু তিনি চোখের পানি ফেলেছেন। এর পর তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

গতকাল দুপুরে ধামরাইয়ের ডাউটিয়া এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন শামসের বড় ভাই প্রয়াত রবিউল করিমের স্ত্রী উম্মে সালমা, মামাতো ভাই ফারুক হোসেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক  মাহমুদ ইকবাল, দীপ্ত টিভির সাভার প্রতিনিধি এম এ হালিম, সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম, ধামরাই রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আদনান হোসেন, বণিক বার্তার সাভার প্রতিনিধি সোহেল রানা, ঢাকা টাইমসের সাভার প্রতিনিধি আহমাদ সোহান সিরাজী প্রমুখ। 

শামসের মামাতো ভাই ফারুক হোসেন বলেন, শামসের পরিবারের ওপর কোনো কালি নেই। তাঁদের সততা সম্পর্কে এলাকার সবাই অবগত। দেশের জন্য জীবন দেওয়া পরিবারের সদস্য শামস। সরকারের কাছে অনুরোধ, অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দিন।

বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ: গতকাল পৃথক বিবৃতিতে এসব সংগঠনের নেতারা অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তি এবং নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এক বিবৃতিতে বলেন, বিরোধী মত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন এবং দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে আসছে।

ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) সভাপতি মামুন ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয় বিবৃতিতে বলেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলে তার প্রতিকারে প্রেস কাউন্সিলের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিধান রয়েছে। সে পথ অনুসরণ না করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এমন ব্যবহার, দেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাক্‌স্বাধীনতা নিয়ে দেশি-বিদেশি মহলের অভিযোগকেই প্রকারান্তরে বৈধতা দিয়েছে।

সাংবিধানিক অধিকার ফোরামের সভাপতি সুরঞ্জন ঘোষ আলাদা বিবৃতিতে বলেন, শামসুজ্জামানকে ডিজিটাল আইনে কারাগারে পাঠানো ঠিক হয়নি। সম্পাদক মতিউর রহমানের নামে বিতর্কিত ডিজিটাল আইনে মামলা দেওয়া সরকারের একটি ভুল পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অব্যাহত অপপ্রয়োগের মধ্য দিয়ে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অবর্ণনীয় হয়রানি ও দুর্দশার মুখোমুখি করার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ সময় আইনের যুগোপযোগী সংশোধনী না আনা পর্যন্ত তা স্থগিত রাখার দাবি জানানো হয়। ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি ঊষাতন তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, মানুষের দুর্দশা ও কষ্টের কথাগুলো যখন গণমাধ্যমে আসছে, তখন সরকার সম্ভাব্য জনরোষের ভয়ে ভীত হয়ে সংবাদমাধ্যমকে সর্বতোভাবে দমনে উঠে পড়ে লেগেছে। সরকার গণমাধ্যমের গলাটিপে ধরতে চায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে এই দমনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। ডিএসএ বাতিল, র‍্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন হত্যার বিচার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো এবং প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাংবাদিক শামসের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শাহবাগে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি: শামসের মুক্তির দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। শামস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

খবর পেয়ে একই সময়ে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাঁরা জাবি শিক্ষার্থীদের সমাবেশের সামনে প্রথম আলো এবং মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অবরোধের কারণে চারপাশের সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। দুপুর ১২টায় জাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমাবেশ শেষ হওয়ার পর সাড়ে ১২টায় তাঁরা অবরোধ ছেড়ে দেন। এর পর রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ডিএসএ বাতিলের ঢাবি সাদা দলের: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিএসএর মতো নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। একই সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও সাংবাদিক শামসের দ্রুত মুক্তির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। গতকাল সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ সব দাবি জানানো হয়।

বগুড়ায় মানববন্ধন: বগুড়া ব্যুরো জানায়, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিএসএ মামলা দায়ের ও সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।

আরও পড়ুন

×