- বাংলাদেশ
- দিনাজপুরে হয়ে গেল ৪৮তম ‘মহাত্রিপুরারী কৈলাশপতির মহাস্নান যাত্রা’
দিনাজপুরে হয়ে গেল ৪৮তম ‘মহাত্রিপুরারী কৈলাশপতির মহাস্নান যাত্রা’

মহাত্রিপুরারী কৈলাশপতির মহাস্নান যাত্রা পূজার একেটি চিত্র
পূর্ব আকাশ সেজে উঠছে সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়। ঘড়িতে তখন ভোর সাড়ে ৫টা। রেললাইনের পাশের মাটির পথ ধরে দলে দলে লোকজন এগিয়ে চলছে। সকলেই সমস্বরে বলছে ‘বোলে বোম, বোম বোম’। সবার হাতে একটি করে পানির পাত্র আর তার ভেতর রয়েছে ফুল ও বেল পাতা। তারা সনাতন ধর্মাবলম্বী।
সোমবার সকালে এই দৃশ্য দেখা যায় দিনাজপুরের সদর উপজেলার কাঁওগা থেকে আনন্দ সাগর পর্যন্ত রেললাইনের পার্শ্ববর্তী মাটির পথে।
এই পথে যাওয়া একটি দলের মধ্যে হাঁটছিলেন সৌরভ অধিকারী। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি বছরেই বাংলা শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবারে আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই পূজা হয়ে থাকে। এই পূজা হচ্ছে ‘মহাত্রিপুরারী কৈলাশপতির মহাস্নান যাত্রা’। এই দিনের পূর্বে আমরা বাড়ি থেকে দিনাজপুরে আনন্দ সাগরের শিব মন্দিরে আসি। এরপর খালি পায়ে হেঁটে উত্তর দিকে প্রবাহিত নদীর পানি নেওয়ার জন্য কাঁওগা আত্রাই নদীতে যাই। সেখানে স্নান শেষে প্রাবাহিত পানি নিয়ে ওই পানি আবার শিবের মাথায় ঢেলে এই পূজা পালন করি আমার।
এমনইভাবে দিনাজপুরে পালিত হলো ৪৮তম মহাত্রিপুরারী কৈলাশপতির মহাস্নান যাত্রা। ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য, ভক্তি, প্রণাম, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতি বছরের বাংলা শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবারে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
আয়োজকরা জানান, দিনাজপুর আনন্দ সাগরে একটি ভাঙা শিব মন্দির ছিল। পরে ১৯৭৪ সালে হনুমান দাস পাটোয়ারী, বাল চাঁদ তোসনিয়াল ও নন্দ কিশোর ডালমিয়াসহ কয়েকজন ভক্তপ্রাণ ব্যক্তি এই শিব মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে এই মন্দিরে পালিত হয়ে আসছে দুই দিনব্যাপী মহাত্রিপুরারী কৈলাশপতির মহাস্নন যাত্রা। এই দিনে শুধু এই মন্দির থেকে ৭ মাইল পূর্বের কাঁওগা এলাকার আত্রাই নদী নয়। মন্দির থেকে ৩৪ মাইল দূরের বীরগঞ্জ উপজেলার মহুগাঁ গ্রামের পুনর্ভবা নদীতেও কেউ কেউ স্নান শেষে এখানে জল নিয়ে আসে।
সৈয়দপুর থেকে আসা সঞ্জিত রায় বলেন, প্রতি বছর এই দিনে আমি এই বীরগঞ্জের মহুগাঁ গ্রাম থেকে খালি পায়ে এখানে হেঁটে জল নিয়ে। কষ্ট হয় কিন্তু ভগবানকে ডাকতে হবে এটাই আমাদের কাজ। নিজের মানস কামনায় এই পূজায় আসি আমি। আমি প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এখানে আসছি। আগামী দিনগুলোতে সুস্থ থাকলে আমি আসব। সকলের মনের ইচ্ছা পূরণ করুক ভগবান। এটাই শেষ চাওয়া।
শহরের বড়বন্দর চকবাজার এলাকার বাপ্পা গুপ্ত বলেন, আমি এখানে ২০ বছর ধরে আসছি। ছোট থেকেই এখানে আসি। আমার ভালো লাগে। শনিবার রাতে বাড়ি থেকে বের হই। এরপর মহুগাঁ গ্রামে যাই। সেখানে রাত্রী যাপন শেষে সোমবার সকালে জল নিয়ে হেঁটে রওনা দিই। তারপর এখানে এসে শিবের মাথায় জল ঢেলে এই পূজা শেষ করি। এটাই নিয়ম। আমি যতদিন আছি ততদিন এই উৎসব পালন করব।
অর্জুন কুমার পাটোয়ারী বলেন, এই শিব মন্দিরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন আমার বাবা হনুমান দাস পাটোয়ারী। সেই সময় আরও কিছু ভক্তবৃন্দ ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রথম আমার বাবা বীরগঞ্জের মহুগাঁ গ্রাম থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত জল নিয়ে হেঁটে এখানে আসেন। সেই জল দিয়ে শিব লিঙ্গকে পরিশুদ্ধ করেন। এরপর থেকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের সমাগমের মধ্যে দিয়ে বোম বোম উৎসব পালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বোলে বোম সেবা কমিটির আয়োজনে এই পূজা পালিত হচ্ছে। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার এই পূজা পালিত হয়। গোটা শ্রাবণ জুড়ে ভারতে এই পূজা হয়। বাংলাদেশে শুধু দিনাজপুরে এবং এখানেই হয়। অন্য কোথাও নেই।
মন্তব্য করুন