ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

'বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও অগ্রগতিতে হুমকি জামায়াত'

'বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও অগ্রগতিতে হুমকি জামায়াত'

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৫:০৭ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৫:০৯

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামী একটি হুমকি। রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভে এ দলের নেতাকর্মীরা বারবার দেশটির গণতন্ত্রকে ব্যাহত করে চলেছে। তবে গণতন্ত্র রক্ষায় দলটির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হাডসন ইনস্টিটিউট নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের 'স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশে ইসলামী মতাদর্শ' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংকস এসব কথা বলেন।

ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের এই রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বলেন, জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা দলগুলো সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যদের জমি দখল করে এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তাদের নিস্তব্ধ করার চেষ্টা করে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে এসব দল এবং তাদের দোসররা দু'জনকে হত্যা করেছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তার মতে, আমেরিকার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন ৭৬ ভাগ বাংলাদেশি।

হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক পরিচালক হুসাইন হাক্কানীর সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক ছিলেন লিবার্টি সাউথ এশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সেথ ওল্ডমিক্সন, ইসলামিস্ট ওয়াচ মিডল ইস্ট ফোরামের পরিচালক স্যাম ওয়েসট্রপ ও ইনভেস্টিগেটিভ প্রজেক্ট অন টেররিজমের সিনিয়র ইন্টেলিজেন্স অ্যানালিস্ট আভা শঙ্কর।

ড. কামাল হোসেনের নামোল্লেখ করে কংগ্রেসম্যান ব্যাংকস বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকলে কামাল হোসেন ও তার দল ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন না বলেছিলেন। ড. কামাল সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং মৌলবাদীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো এবং বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহায়তার মাধ্যমে মৌলবাদের উত্থান প্রতিরোধ করা।

ব্যাংকস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বিরাজ করছে। এই সম্পর্কের আরও উন্নয়নে এবং বাংলাদেশের মাটি থেকে জামায়াতের মতো মৌলবাদী দলগুলোকে নির্মূলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা প্রয়োজন, যাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারে।

সেথ ওল্ডমিক্সন বলেন, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অভ্যুত্থান ও হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের মুক্ত করে দিয়ে তাদের পুনর্বাসন করেন। তারপর থেকেই বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান শুরু হয়।

তিনি বলেন, 'আসন্ন নির্বাচনে আমরা আবারও সেটি দেখছি। বিএনপি জামায়াতে ইসলামীকে প্রায় ২৫টি আসন ছেড়ে দিয়েছে, যা ড. কামালের গণফোরামের চাইতে বেশি। ড. কামাল বলেছিলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী থাকলে গণফোরাম ঐক্য করবে না। তিনি শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পারেননি। বরং তারা মৌলবাদীদের কাছে টেনে নিয়েছেন।'

ওল্ডমিক্সন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পরিবর্তনে জামায়াতে ইসলামী একের পর এক লবিস্ট নিয়োগ করে চলেছে। ইসলামের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পর্ক নেই। তারা মওদুদীবাদের অনুসারী, যা ইসলাম ধর্মের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।

স্যাম ওয়েসট্রপ বলেন, বাংলাদেশে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াতের অত্যন্ত শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। প্রচুর অর্থব্যয়ের মাধ্যমে লবিস্ট নিয়োগ ছাড়াও আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতেও বিএনপি-জামায়াত অত্যন্ত সক্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রে জামায়াতের শাখা মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয় করে বিভিন্ন মসজিদ দখল করে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। কিছুদিন আগেও বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট লন্ডনে বসবাসরত ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক আমেরিকায় এসে লবিং করে গেছেন। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া মতিউর রহমান নিজামীর সন্তানও আমেরিকায় বসবাস করছেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি মহিউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং বিভিন্নভাবে জামায়াতকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

আভা শঙ্কর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামী সংগঠন ইকনা ও মুনা জামায়াতের শাখা। ইনভেস্টিগেটিভ প্রজেক্ট অন টেররিজম দীর্ঘদিন ধরেই এদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে। এই দুটি সংগঠন জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অত্যন্ত চতুরতা ও দক্ষতার সঙ্গে গোপন করে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তারা খোলাখুলিভাবে জামায়াতের কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা করে না। তারা তরুণ সমাজকে ধর্মের মাধ্যমে টার্গেট করে সংগঠনে যুক্ত করছে।

আরও পড়ুন

×