ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

প্রিন্সেস ডায়ানাসহ ২৩ হাজার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন তিনি

প্রিন্সেস ডায়ানাসহ ২৩ হাজার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন তিনি

ডা. রিচার্ড শেফার্ড

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ০৫:৩৬ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ০৬:৩৫

সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত কিছু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট ডা. রিচার্ড শেফার্ড। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে বোমা হামলায় নিহতদের থেকে শুরু করে ২০০৫ সালে লন্ডন হামলার নিহতরা, ১৯৯৩ সালে খুন হওয়া স্টিফেন লরেন্স থেকে শুরু করে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এভাবে ৩৫ বছরে ২৩ হাজারেরও বেশি ময়নাতদন্ত করেছেন রিচার্ড শেফার্ড।

দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করার ফলে দেখা দিয়েছে নানা ধরণের মানসিক জটিলতা। ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট পেশা তার মানসিক স্বাস্থ্যকে কতোটা প্রভাবিত করেছে তা জানিয়ে বিবিসির ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার অনুষ্ঠানকে শেফার্ড বলেন, এক জায়গায় ২০০টি টুকরা, ক্ষতবিক্ষত প্রাণহীন দেহ মনে একটি ছাপ রেখে যায়। গত ৩৫ বছর ধরে মৃত্যুর সঙ্গে আমার পরিচয়। কিন্তু এর মধ্যে এমন একটা সময় আসে যখন এটিকে দৈনন্দিন জীবন থেকে আলাদা করা সম্ভব হয় না।

ডা. শেফার্ডে'র অনুমান অনুযায়ী, ক্যারিয়ারে ২৩ হাজারেরও বেশী পোস্ট মর্টেম করেছেন তিনি। এর মধ্যে অনেক মৃতদেহই ছিল গত কয়েক দশকে সংঘটিত বহুল আলোচিত সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের। দীর্ঘদিন এই পেশায় থাকার কারণে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) ভুগতে হয়েছে তাকে। নিজের বয়স যখন ষাটের কোঠায়, এই সমস্যা শনাক্ত করতে পারেন তিনি। পানীয়ের গ্লাসে বরফের উপস্থিতি তাকে মানসিক সমস্যা শনাক্ত করতে সহায়তা করে।

২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বোমা হামলায় নিহতদের ময়নাতদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ডা. শেফার্ড। সেসময় বরফ না থাকায় মৃতদেহগুলো শীতল রাখা সম্ভব হয়নি। তখনই মানসিক সমস্যার সূত্রপাত হলেও ডা. শেফার্ড মনে করেন, এর শুরু আরও বছর দশেক আগে।

১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডের হাঙ্গারফোর্ড এলাকায় বন্দুকধারী মাইকেল রায়ান আত্মহত্যা করার আগে ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ডা. শেফার্ডের প্রথম বড় কেস ছিল সেটি। তিনি বলেন, হাঙ্গারফোর্ড হত্যাকাণ্ডের পর আমার মানসিক অস্থিরতার প্রথম ইঙ্গিতটা পাওয়া যায়। ওই ঘটনা খুবই উদ্ভট ও অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি তৈরি করেছিল আমার ভেতরে। যা পরবর্তীতে ক্রমবিস্তার লাভ করে।

নিজের নতুন বইয়ে ডা. শেফার্ড লিখেছেন, একসময় চোখ বন্ধ করতেও অস্বস্তি বোধ করতেন তিনি। কারণ তার মনে হতো, চোখ বন্ধ করলে রক্তাক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার চিন্তাকে গ্রাস করবে। তিনি বলেন, পরিপাকতন্ত্র, স্যাঁতস্যাঁতে যকৃত, স্পন্দনহীন হৃদপিণ্ড, ছিন্ন হাত, দম আটকানো রক্তের গন্ধ প্রতিনিয়ত আমার শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা দিতো। মাঝেমধ্যে আমার মনে হতো এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মনে হয় মৃত্যুই ভালো।

তবে ময়নাতদন্ত যে কোনো নির্দয় বিষয় নয় তা মনে করিয়ে দিয়ে শেফার্ড বলেন, মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা কেন তৈরি হয়েছে তা আমি বুঝি। কিন্তু এটিও জটিল অস্ত্রোপচার। আর এর ফলে মৃতদেহগুলো দেখতে কদর্য হয়ে যায় না। তিনি আরও বলেন, ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে মূল কাজটিই হলো সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করা। সত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- আমি এই নীতিতে বিশ্বাসী। আমি মৃতের পরিবারকে সবচেয়ে নিখুঁত তথ্য জানানোর চেষ্টা করি।

ডা. শেফার্ড জানান, মৃতের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন তা হলো, 'মৃত্যুর সময় কি সে ব্যথা অনুভব করেছিল?' তিনি বলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে পরিবারের সদস্যরা যতই আঘাত পাক না কেন, আমি সাধারণত সত্যটাই বলে থাকি। সূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুন

×