ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

শিক্ষার্থীরা আশাবাদী, সন্দেহ যাচ্ছে না ছাত্রনেতাদের

ডাকসু নির্বাচন

শিক্ষার্থীরা আশাবাদী, সন্দেহ যাচ্ছে না ছাত্রনেতাদের

সাব্বির নেওয়াজ ও ইমাদউদ্দিন মারুফ

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৯:৪৬

সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশাবাদী। তবে কিছুটা সন্দেহ আর সংশয়ে আছে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে তারা। ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এ নির্বাচন নিয়ে আশাবাদের বাণীই শোনাচ্ছে। অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের মন থেকে সন্দেহ-সংশয় অবশ্য যাচ্ছে না। তারা বলছেন, নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সবার আগে ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা জরুরি।

এ নির্বাচনের বিষয়ে এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের সভা। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সভা শেষ হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং অংশগ্রহণকারী ছাত্র সংগঠনগুলো। আলোচনায় উত্থাপিত সব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী বছরের মার্চ মাসে নির্বাচনের কথা বলেছে। এর সঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে পদক্ষেপের কথাও বলেছে। পরিবেশ পরিষদের এ সভার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে ডাকসু নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। ডাকসু নির্বাচন যথাযথ সময়ের মধ্যেই হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম রবিন বলেন, রোববার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের আলোচনায় সব ছাত্র সংগঠনের উপস্থিতি আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রদলের সভাপতির সঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের আলিঙ্গন মুগ্ধ করেছে আমাকে। আলোচনার মাধ্যমে যদি সব ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সহাবস্থানের সৃষ্টি হয়, তবে আমরা সঠিক সময়ে ডাকসু নির্বাচনের আশা করতেই পারি।

আলোচনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ছাত্রলীগ সবসময়ই ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের আলোচনার পর থেকে ডাকসু নির্বাচনের যে আবহ তৈরি হয়েছে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। আমরা চাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। দলমত নির্বিশেষে সবাই যেন গণতান্ত্রিকভাবে ক্যাম্পাসে অবস্থান করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের এ সভাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি আমরা। প্রত্যাশা করি, এখান থেকেই ডাকসুর নতুন যাত্রা শুরু হবে। তবে নিজের সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, সভায় আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে দাবি জানানো হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করবে সেটা দেখার বিষয়। আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলাম ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের বিষয়ে। আশা করি নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহাবস্থান নিশ্চিত করবে। আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে রাজনীতির চারণভূমি ছিল, তা আগের রূপে ফিরে আসুক।

ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী জানান, পরিবেশ পরিষদের সভায় তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচন অনেক আগে থেকেই তারা চাচ্ছিলেন। নিজের সন্দেহ জানিয়ে তিনি বলেন, আগেও অনেকবার ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। অনেক বক্তব্যও দেওয়া হয়েছিল। তবে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নেতৃত্বের বিকাশে ডাকসুর কোনো বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার যে অপবাদ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করছে, তার অবসান হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দলের আহ্বায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ পরিষদের আলোচনার মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে, এটা আমি মনে করছি না। এতে একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে মাত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রত্যক্ষ কোনো ভূমিকা থাকে না, তারপরও এটা 'ওপেন সিক্রেট' যে, ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছা না থাকলে ডাকসু নির্বাচন হয় না। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে, তবে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সিনেটে-সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধি নেই ২৬ বছর :স্বায়ত্তশাসিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা কাঠামোর সবচেয়ে উপরের স্তরে আছে সিনেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণে, আইন বাতিল ও সংশোধনের এখতিয়ার রয়েছে সিনেটের। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এ সিনেটে নির্বাচিত ডাকসু থেকে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু তা নেই ২৬ বছর ধরে। আছেন শুধু উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সরকার কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তা, স্পিকার মনোনীত সংসদ সদস্য, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রমুখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা কাঠামোর দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী পরিষদ এটি। শিক্ষক এবং সরকারি কর্মকর্তারা এ পরিষদের সদস্য। কিন্তু সিনেটে আইন দ্বারা পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধির কথা থাকলেও সিন্ডিকেটে এর কোনো নামগন্ধও নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ছাত্রদের অংশীদারিত্ব নেই আড়াই যুগের বেশি। আবার নির্বাচন না হলেও প্রতি বছর ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদের জন্য ঢাবির শিক্ষার্থীদের থেকে ১২০ টাকা চাঁদা নেয় কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছর এ ডাকসুর ফান্ডে প্রচুর অর্থ জমলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য খাতে।

সাবেক ভিপিদের বক্তব্য :ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আদালতের রায়ের পর এ বিষয়ে একটি সভা করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম। এ কাজে আদালতকে রায় দিতে হবে কেন? যারা এত বছর ছাত্রদের অধিকার বঞ্চিত করেছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত।'

ডাকসুর অপর সাবেক ভিপি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডাকসু নির্বাচন সবাই চায়। আদালতের কারণে পরিবেশ পরিষদের সভা ডাকতে বাধ্য হয়েছেন তারা। ঢাবি কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগ যেন লোক দেখানো উদ্যোগে পরিণত না হয়।

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান গত সোমবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যান। তিনি মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে একান্তে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। তবে এ বৈঠকের বিষয়ে উপাচার্য অবশ্য কিছু বলতে চাননি।

আরও পড়ুন

×